কাকে বলে রোগী কেন্দ্রিক চিকিৎসা? একটি চিকিৎসার কাহিনিএকটি অভিজ্ঞতার গল্প শুনুন। মাস দুয়েক আগের কথা। বাড়িতে শীর্ষাসন করতে গিয়ে মনে হয় ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিলাম। প্রথম দু-একদিন ঘাড়ে অল্প ব্যথা করছিল । তারপর একদিন মাঝরাতে পিঠের যন্ত্রণায় ঘুম ভেঙে গেল। পিঠের ডান দিকে যন্ত্রণা হচ্ছিল, ডানহাতের বুড়ো আঙুলে সাড় ছিল না, হাত দুর্বল; তখন মনে হল কাঁধে গরম জলের ব্যাগ দিয়ে রাখি, তাহলে হয়ত আরাম হবে। জল ফুটিয়ে ব্যাগে যেই পুরতে গেছি, ফুটন্ত জল চলকে আমার ডান হাতে পড়ল, অমনি হাতের চামড়া ঝলসে গেল । একে সপ্তাহের শেষ, তায় অত রাতে ডাক্তার পাওয়া যাবে না, হাসপাতাল আমার বাড়ি থেকে বড় শহরে একশ কিলোমিটার দূরে, অতএব নিজের প্রাথমিক চিকিৎসা নিজেকেই করতে হল। কোন রকমে দুদিন গেল। ততদিনে দেখা গেল যে হাতে বেশ বড়সড় একটা ফোসকা পড়েছে। ঝলসানো চামড়ার ও ফোসকার ড্রেসিং করাতে আমার পরিচিত একটি ক্লিনিকে গেলাম। সেখানে এক অপরিচিতা নার্স আমার চিকিৎসা করলেন। তিনি ড্রেসিং করার সময় থমথমে মুখে কাগজ দেখে মন দিয়ে কাজ করে গেলেন, আমার সঙ্গে একটি কথাও বললেন না। আমার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল যে তাঁর সামনে একজন মানুষ বসে আছে, সে মাঝে মাঝে যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠছে, তাকে আমল দেওয়া দূরের কথা, যন্ত্রণা হচ্ছে কি না, একবার জিজ্ঞেসও করলেন না, খস খস করে কাঁচি দিয়ে, এমন ভাবে পোড়া চামড়া কেটে দগদগে কাটা ঘায়ের ওপর মলম আর পটি দিয়ে ড্রেসিং করলেন হাতটা যেন শরীরের বাইরের কোন একটা অংশ, তারপর নিপুণ হাতে পরিপাটি করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিলেন। দিয়ে আমাকে মৃদু শাসনের সুরে বললেন, এই ভাল করে ড্রেসিং করে দিলাম, বাইরে বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যান। দেখবেন যেন একটুও জল লাগাবেন না, সাত দিনে সেরে যাবে।চিকিৎসা শুরু হবার দশ দিনের মাথায় হাতের ঘা সেরে গেল, পটি খোলা হল। আমি সুস্থ হলাম। আমার চিকিৎসা যে চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্টরা, নার্স-রা করেছেন তাঁরা সকলে অভিজ্ঞ ও দক্ষ, তাঁদের পেশাগত নৈপুণ্য প্রশ্নাতীত, ক্লিনিকটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, তাতে প্রায় যত রকমের আধুনিক ব্যবস্থা থাকা প্রত্যাশিত সব ছিল। আমার দেশ, নিউজিল্যাণ্ডে, সরকার দেশের মানুষের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন, তাই আমার চিকিৎসার মোট খরচ নামমাত্র, এবং আমি যথাসময়ে কোন রকম গোলমাল ছাড়াই পুরোপুরি ভাল হয়েও গেছি ।তথাপি সেদিনের নার্স ভদ্রমহিলার কাছে পাওয়া সেই নৈর্বক্তিক নিদান বলুন কি দাওয়াই, আমার মনে দাগ কেটে গেল । ব্যাণ্ডেজ করা হাতের ভেতরের যন্ত্রণা সহ্য যেমন করেছি, তেমনি আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এই যে চিকিৎসা পেলাম, এ চিকিৎসা প্রকৃত গুণমান কিভাবে বিবেচনা করব? এ চিকিৎসার গুণমান যদি নিরূপণ করতে হয়, রোগী হিসেবে তাতে চিকিৎসা পেতে গিয়ে আমার মনে যে অসন্তোষ দেখা দিল তাকে কি উপেক্ষা করব? কেন? চিকিৎসার মান শুধু কি শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে যাওয়া দিয়ে বিচার করা হবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য কেবল শরীরের রোগমুক্তি নয়, মন ভাল হওয়া, সামাজিক ভাবে সুস্থ থাকা, সবকিছু নিয়ে \cite{3075921}। তাই যদি হবে, তাহলে রোগীর প্রতি চিকিৎসকের নৈর্বক্তিক আচার আচরণকে, যে আচরণে রোগী বিমর্ষ বোধ করেন, চিকিৎসার মান নির্ধারণে তাকেও বিচার করে দেখতে হবে নিশ্চয়ই? কোন উপায়ে গোটা বিষয়টিকে মাপা যেতে পারে? চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীর পরিপ্রেক্ষিত বিচার না করা হলে সে চিকিৎসা কি মানবিক? গুণ নিরূপণ করতে গেলে সে চিকিৎসা ভাল না মন্দ? ভাল চিকিৎসার "ভাল" ব্যাপারটি কাকে বলে? অন্যদিকে কিভাবে ভাল চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠান চিনব? কিভাবে ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করব? কিভাবে চিকিৎসার মান নিরূপণ শুধু নয়, মাপযোক করব? এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই এই লেখার উদ্দেশ্য।চিকিৎসা ব্যবস্থার ও চিকিৎসার গুণমান কেন বিচার করব?আমাদের সকলের -- রোগী, চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবা যাঁরা দিই, এমনকি সরকারের পরিপ্রেক্ষিতেও, চিকিৎসা-ব্যবস্থার গুণমান বিচার খুঁটিয়ে দেখার একটা প্রয়োজন আছে। আমরা সবসময় চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তার সহজে নাগাল পাই না। প্রায়ই চিকিৎসা এত সময় ও অর্থ সাপেক্ষ হয়ে পড়ে, আমরা চিকিৎসা করাতে পারি না। আবার যখন পারি, তখন নিখুঁত কারিগরের হাতে সংবেদনহীন, নৈর্বক্তিক, ও আন্তরিকতাহীন চিকিৎসা আমাদের অনেককেই সহ্য করতে হয়। আমরা যারা রোগী, তারা প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করি; তা সত্ত্বেও যে চিকিৎসা পরিষেবা আমরা পাই তাতে আমাদের কথা কতটুকু বিচার বিবেচনা করা হয়?চিকিৎসা পরিষেবার কথা বললে তিনটি স্তরে "চিকিৎসার" কথা বলা হয়। আমারদের দেশের পরিকাঠামোয় চিকিৎসা পরিষেবা তিনটি পৃথক স্তরে দেওয়া হয় -- প্রাথমিক, মাধ্যমিক, এবং বিশেষজ্ঞ-কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রাথমিক স্তরে মূলত প্রতিষেধ-মূলক চিকিৎসা বা পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় । আমাদের দেশে যাঁরা সাধারণ ডাক্তারবাবু, পারিবারিক ডাক্তার, পাড়ার ডাক্তার, "ডাক্তার কাকু/জেঠু", যাঁরা বরাবর আমাদের পরিবারের কাছাকাছি থেকে চিকিৎসা করেছেন, জ্বর জারি হলে প্রথমে তাঁদের কাছে যাওয়া হয়, টিকা দিতে হলে তাঁদের শরণাপন্ন হতে হয়, এ হল সেই স্তর। এঁদের পরে মাধ্যমিক স্তরে যে ধরণের পরিষেবা দেওয়া হয় তাতে অপেক্ষাকৃত জটিল অসুখের দ্রুত নির্ধারণ ও চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করতে হবে। তা পারিবারিক চিকিৎসকরাও করতে পারেন, বা "সাধারণ" (এখানে সাধারণ বলতে বিশেষ রোগের হাসপাতাল নয় এরকম হাসপাতাল) হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এর মধ্যে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা, শল্য চিকিৎসা, স্ত্রীরোগ, ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত চিকিৎসা, শিশুদের চিকিৎসা পড়ে। সরকারী হাসপাতাল, বেসরকারী নার্সিং হোম, হাসপাতাল এই ধরণের জায়গায় মানুষ চিকিৎসা করাতে যান। এর পরবর্তী স্তরে খুব জটিল রোগের বিশেষজ্ঞ স্তরের চিকিৎসা। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরে রোগ সারানো না গেলে মানুষকে নানা ভাবে রোগমুক্তি বা বিশেষ ক্ষেত্রে অঙ্গ- প্রতিস্থাপনার বন্দোবস্ত করা, জটিল অস্ত্রোপচার, এই ধরণের চিকিৎসা এর লক্ষ্য। এই ধরণের চিকিৎসা প্রযুক্তিগত দিক থেকে জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ, এর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা করবেন। যে হাসপাতালে সেই চিকিৎসা হবে, তাকে স্পেশালিটি বা সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল বলা হয়। ভারতে সরকারী স্বাস্থ্য দপ্তরের মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবার পৌঁছনর দায়িত্ব থাকে, সরকার ও সমাজ এইরকম একটি পরিকাঠামোয় পরিষেবা দেবার ব্যবস্থা করেন । এখন প্রশ্ন, চিকিৎসা পরিষেবার মান নির্ধারণ করার সময় এই তিনটি স্তরকে কিভাবে বিবেচনা করব বা তাকে কিভাবে মাপব? গুণমান নির্ধারণ করার কিবা প্রয়োজন? দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে আসা যাক।এক, মান নির্ধারণ না বিচার করতে শিখলে, আপনি যে-ই হোন, আপনি ঠকে যেতে পারেন, এমনকি আপনার প্রাণসংশয় অবধি হতে পারে। কোন চিকিৎসা-ব্যবস্থার মান ভাল, কোনটির মান আরো ভালো, এ বিষয়টি জটিল। আমরা রুগীরা বা তাঁদের বাড়ির লোকেরা কোন বিশেষ একটি স্বাস্থ্য-সংস্থা, বা কোন একটি রাজ্যের চিকিৎসা-ব্যবস্থা, কি কোন হাসপাতালকে হয়ত ওপর থেকে দেখে ভাবছি খুব ভাল, আসলে রোগী নিয়ে সেখানে ভর্তি হতে বা চিকিৎসা পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়, ভুল চিকিৎসা হতে পারে, নষ্ট সময় ও অর্থদণ্ডের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম । আবার অন্যদিকে কোন একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটিকে মনে মনে খারাপ ভাবছি, হয়ত সেখানে কম পয়সায় চিকিৎসা হয়, সে হয়ত বাইরে থেকে দেখতে মামুলি, তাই তাকে প্রত্যাখ্যান করলাম, অথচ সেখানেই চিকিৎসা করাতে গেলে দেখতাম তারা অতি আন্তরিক ও খুব ভাল চিকিৎসা করে। আর কিছু না হোক, অনাবশ্যক অর্থদণ্ডের হাত থেকে রেহাই পেতাম। দুই, চিকিৎসকদের কথা ভেবে দেখুন। আজকাল ভারতে হাসপাতালের ডাক্তারদের, বা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, এমন ডাক্তারদের, রোগীর বাড়ির লোকেরা বা আপামর জনসাধারণ গায়ে হাত তুলছে, এ ধরণের অন্যায়, দুঃখজনক সংবাদ ইদানীং শোনা যাচ্ছে \cite{Ambesh2016749}। সংবাদপত্রের খবরে বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় ডাক্তারবাবু যে চিকিৎসা করেছেন তাতে কোন ভুল নেই, তবুও তাঁকে অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে । ডাক্তারবাবু ভাবছেন তিনি তাঁর জ্ঞানবুদ্ধিঅভিজ্ঞতা-প্রসূত, সাধ্যমত চিকিৎসা করেছেন, অভিজ্ঞতা ও প্রমাণের ভিত্তিতে যা চিকিৎসা তিনি করেছেন, উন্নত মানের চিকিৎসা বিচার করতে গেলে এইটুকুই যথেষ্ট। ডাক্তারের পক্ষে চিকিৎসা কতটা খরচসাপেক্ষ বা রোগী-চিকিৎসাকারী দলের পারস্পরিক সম্পর্ক বা রোগীদের রোগ নিয়ে অবহিত করা, তাদের সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলার ব্যাপারটি তাঁর চিকিৎসক সত্তা দিয়ে বিচার করলে গৌণ বলে মনে হবে। চিকিৎসার জটিল দিক, কারিগরি দিকটি তিনি ভাল বোঝেন, সেটিই তাঁর লক্ষ্য । অথচ চিকিৎসা ত্রুটিহীন হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে রোগীপক্ষের অসন্তোষের শিকার হতে হল, এমনও হতে পারে তিনি হয়ত রোগীর সঙ্গে যথেষ্ট ভদ্র ও সঙ্গত আচরণ করলেন, কিন্তু চিকিৎসাকারী দলের অন্যান্য সদস্য বা অন্যান্যরা রোগীর পরিবার বা রোগীর সঙ্গে অশিষ্ট আচরণ করাতে রোগীর বাড়ির লোক অসন্তুষ্ট হলেন, সব মিলিয়ে চিকিৎসার যাবতীয় দায়, রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকের রোষ, বেচারা ডাক্তারবাবুর ঘাড়ে পড়ল, যেহেতু চিকিৎসা পরিষেবার তিনিই মুখ \cite{Madhiwalla_2006} । ডাক্তারবাবু চিকিৎসার মান একরকম করে ভেবেছেন, রোগী আর তাঁর বাড়ির লোকেদের চোখে সেই চিকিৎসার গুণমান আরেক রকম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব ডাক্তার ও রোগীর পক্ষ থেকে চিকিৎসার গুণের মাণ নির্ধারণের, বিশেষ করে মাপজোক করার তাগিদ আছে যাতে করে অন্তত এইটুকু বোঝা যায় যে, চিকিৎসার সামগ্রিক মানের দিক থেকে বিচার করলে কোনটি যথেষ্ট উচ্চমানের ও কোনটি নিম্নমানের তার একটা সাধারণের গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা থাকা উচিৎ, সে চিকিৎসার ফলাফল যাই হোক না কেন। এখানে তিনটি বিষয় বিবেচনা করার আছে। এক, ডাক্তারবাবুর দিক থেকে চিকিৎসার গুণমান শুধু রোগমুক্তি বা যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে বিচার বিবেচনা করলে যথেষ্ট হবে না, আরো কিছু বিষয় ভেবে দেখতে হবে। দুই, চিকিৎসা কি স্বাস্থ্যের মান নিরূপণের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই সরকারী, বেসরকারী, আন্তর্জাতিক, নানারকম পরিসংখ্যানের সাহায্য নিই। পাঁচ বছর বয়সের কম বয়সী শিশু মৃত্যু, বা চিকিৎসক-পিছু কত শয্যা, সেই সংখ্যার নিরিখে গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার সামগ্রিক মান নিরূপণের একটা আবছা ছবি আমরা পাই। চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান নির্ধারণ করতে গিয়ে তাতে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে হয়ত, তবে সে নেহাতই মোটা দাগের মাপ। এই ধরণের পরিমাপ যেহেতু সামগ্রিক তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে করা হয়, তাতে ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে কি প্রযোজ্য তা বোঝা যাবে না । তিন, রোগীর পরিপ্রেক্ষিত বাদ দিয়ে রোগ নিদানের গুণমান বিচার করা এক্ষেত্রে অর্থহীন। রোগমুক্তির বিচার যাঁরা রোগের পরিষেবা দেন, বা রোগীর পরিপ্রেক্ষিত বাদ দিয়ে করবেন কি করে? আর করবেনই বা কেন? গুণমানের মাপযোকের ব্যাপারটি আলোচনার করার আগে আরো দুটো কথা বলার আছে -- এক, স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা ব্যবস্থার শরিকদের চিনে নিতে হবে, আর দুই, পরিকাঠামো বলতে কি বোঝাতে চাইছি সেটি স্পষ্ট হওয়া চাই।